বাগাতিপাড়া(নাটোর)প্রতিনিধিঃ
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় বহিরাগত সাংবাদিক পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব বিস্তারকারী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সম্প্রতি সামাজিক ও প্রশাসনিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে "বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন" নামক একটি সংগঠন জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
কে এই ফ্যাসিবাদী সম্পৃক্ত সাংবাদিক? রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দা মোঃ মঞ্জুরুল আলম মাসুম, পেশায় তিনি একটি বেতনভুক্ত কলেজের শিক্ষক। যিনি জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী বাগাতিপাড়া উপজেলা তথা নাটোর জেলারই ভোটার নন, অথচ বিগত সৈরাচারী সরকারের ১৬ বছর ধরে নিজেকে বাগাতিপাড়ার সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে সরকারি-বেসরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাগাতিপাড়া উপজেলা তথা নাটোর জেলারই ভোটার নন একথা স্বীকার করে ,অভিযুক্ত মঞ্জুরুল আলম মাসুম জানান তিনি পাশ্ববর্তী রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দা। চাকুরি সুবাদে এখানে থাকেন, তার পত্রিকা অফিস কোন আপত্তি না করাই তিনি এখানে কাজ করছেন। তবে বিগত ১৬বছর সুবিধা নিয়ে ফ্যাসিবাদের সাথে সম্পৃক্ততা কথা এড়িয়ে গিয়ে ,‘র’ এর সাথে সংযোগের অভিযোগটি অস্বীকার করেন তিনি।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, তিনি বিভিন্ন দপ্তর থেকে তথ্য গোপন করে সংবাদকর্মী হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছেন এবং তার এই অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞাপন, আমন্ত্রণপত্র ও সাংবাদিকদের জন্য নির্ধারিত সুবিধাগুলো নিয়মবহির্ভূতভাবে ভোগ করছেন।
স্মারকলিপিতে যে দাবিগুলো উত্থাপিত হয়েছে- বহিরাগত হিসেবে মাসুমকে আর কোনো সুবিধা না দেওয়া; সকল সরকারি-বেসরকারি সভা, দপ্তর ও আনুষ্ঠানিকতা থেকে বয়কট করা; তথ্য গোপন করে সরকারি সুযোগ গ্রহণের তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ; স্থানীয় ভোটার ও প্রকৃত সাংবাদিকদের জন্য সাংবাদিক সুবিধা সংরক্ষিত রাখা।
ফ্যাসিবাদী সম্পৃক্ততা ও ‘র’ সংযোগের অভিযোগ- সবচেয়ে গুরুতর দিকটি হলো-তার বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক সংগঠনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগী হওয়ার অভিযোগ এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণের তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে প্রকাশ হয়। স্মারকলিপির সঙ্গে এনআইডি কার্ডের কপি ও সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানের ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে, যা প্রশাসনিক তদন্তে সহায়ক প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত আছে।
দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বলেন, “মাসুম মূলত একজন কলেজ শিক্ষক। অথচ কর্মঘণ্টায় তিনি উপজেলা প্রশাসনিক এলাকায় সাংবাদিকতার নামে প্রভাব বিস্তার করেন-এটি নৈতিক ও পেশাগত উভয়দিক থেকেই অগ্রহণযোগ্য।” তাছাড়াও রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দা বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রশাসনে বিভিন্ন কমিটিতে তার থাকা বা রাখাটা মোটেও কাম্য নয় বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাগাতিপাড়ার প্রকৃত সাংবাদিকরা অবমূল্যায়িত হচ্ছেন এবং একপ্রকার সামাজিক প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মাসুম।
এ ঘটনায় নাটোর জেলা প্রশাসক আসমা শাহিন বলেছেন, এই সমস্ত ব্যাক্তিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে স্মারকলিপির কপি রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
বহিরাগত পরিচয়ে স্থানীয়ভাবে প্রভাব বিস্তার ও নিষিদ্ধ সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। এ ধরনের অভিযোগ তদন্তসাপেক্ষে যদি প্রমাণিত হয়, তবে তা শুধু ব্যক্তিগত নয়, প্রশাসনিক দুর্বলতার দৃষ্টান্ত হিসেবেও বিবেচিত হবে। নাটোরের সাংবাদিক সমাজ এবং সচেতন মহল এই ঘটনায় স্বচ্ছ তদন্ত ও কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধুমাত্র সাংবাদিকতার নামে প্রতারণা নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক ন্যায়নীতির জন্যও উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।